অনেক
আগে থেকেই চিকিৎসক ও বিজ্ঞানীরা মেনে আসছেন হাঁটাই সর্বোৎকৃষ্ট ব্যায়াম। সব বয়সের মানুষের
জন্য সবচেয়ে উপযোগী এ ব্যায়ামটি সবচেয়ে কম খরচে শারীরিকভাবে সবচেয়ে ভালো থাকার অন্যতম
উপায়। জন্মের এক বছরের মাঝেই শিখে নেয়া এ ব্যায়ামটি ঘরে-বাইরে যেকোনো জায়গায় করা যায়,
ব্যক্তির শারীরিক ক্ষমতা অনুযায়ী এর তীব্রতা বাড়ানো-কমানো যায়, উপযুক্ত পোশাক এবং এক
জোড়া ভালো জুতো ছাড়া এর জন্য আর কোনো অতিরিক্ত ব্যয়ের প্রয়োজন পড়ে না। ব্যায়ামের উদ্দেশ্যে
নিয়মিত হাঁটার স্বাস্থ্যকর উপযোগিতা অনেক।
হৃদযন্ত্রের সুরক্ষা ও উচ্চ
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ
নিয়মিত
হাঁটার ফলে হৃদযন্ত্রের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। ফলে হৃদযন্ত্র স্বল্প চেষ্টায় দেহে
অধিক পরিমাণে রক্ত সরবরাহ করতে পারে এবং ধমনীর ওপরও চাপ কম পড়ে। ফলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে
রাখতে এই হাঁটা অনেকটা উচ্চ রক্তচাপরোধী ওষুধের মতোই কাজ করে। এ ছাড়া হাঁটার ফলে রক্তে
খল কোলেস্টেরল নামে পরিচিত লো-ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন কমে যায়। এই খল কোলেস্টেরল পরিমাণে
বেড়ে গেলে তা ধমনীর গায়ে জমা হয়ে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ায়। যুক্তরাষ্ট্রে প্রায়
৭২ হাজার নারীর ওপর পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা সপ্তাহে অন্তত তিন ঘন্টা অথবা
দৈনিক আধঘন্টা হাঁটেন, তাদের ক্ষেত্রে হৃদরোগ হওয়ার ঝুঁকি অন্যদের চেয়ে ৩০ থেকে ৪০
শতাংশ কম।
ডায়াবেটিস ও স্ট্রোকের ঝুঁকি
হ্রাস
গবেষণায়
দেখে গেছে, রজ:নিবৃত্ত-পরবর্তী বয়সে যেসব মহিলা প্রতিদিন অন্তত: এক মাইল করে ব্যায়ামের
উদ্দেশ্যে হাঁটেন, তাদের হাড়-ঘনত্ব কম-সচল মহিলাদের তুলনায় বেশি। হাঁটার ফলে যেমন হাড়
ক্ষয়ের প্রবণতা হ্রাস পায়, তেমনি আর্থ্রাইটিসসহ হাড়ের নানা রোগের আশঙ্কাও কমে যায়।
কমে যায় বয়সকালে সহজেই কোমরের হাড় ভাঙার ঝুঁকিও।
মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়ন
হাঁটার
ফলে ভালো লাগার অনুভূতি জাগে মনে, মানসিক চাপ বোধ হয় কম। এ সময় শরীরে এন্ডোরফিন নামে
রাসায়নিকের ক্রিয়া বেড়ে যায় বলে ঘুম হয় আরামদায়ক। মেডিসিন নেট ডটকম ওয়েবসাইটে প্রকাশিত
এক প্রতিবেদনে গবেষকরা বলেন, প্রতিদিন ৩০ মিনিট করে সপ্তাহে তিন থেকে পাঁচ মিনিট হাঁটার
ফলে বিষণ্নতার উপসর্গ ৪৭ শতাংশ হ্রাস পায়। অপর এক গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব মহিলা সপ্তাহে
অন্তত দেড় ঘন্টা হাঁটেন, তাদের বোধশক্তি সপ্তাহে ৪০ মিনিটের কম হাঁটা মহিলাদের তুলনায়
বেশি।
ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাস
মহিলাদের
ওপর পরিচালিত গবেষণায় দেখা গেছে, যারা ব্যায়ামের উদ্দেশ্যে সপ্তাহে অন্তত দেড় থেকে
আড়াই ঘন্টা হাঁটেন, তাদের স্তন ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি, যারা হাঁটেন না তাদের চেয়ে ১৮
শতাংশ কম। ব্রিটিশ জার্নাল অব ক্যান্সার স্টাডিতে প্রকাশিত আরেক গবেষণা প্রতিবেদনে
বলা হয়েছে, হাঁটার ফলে খাদ্যনালীর নিম্নাংশের ক্যান্সারের ঝুঁকি ২৫ শতাংশ হ্রাস পায়।
ওজন নিয়ন্ত্রণ, শারীরিক সক্ষমতা
বৃদ্ধি
স্বাস্থ্যকর,
সুষম খাবার এবং নিয়মিত হাঁটা দীর্ঘমেয়াদি ওজন নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির মূল চাবিকাঠি। হাঁটার
মাধ্যমে শারীরিক সক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এমনকি বৃদ্ধ বয়সেও সবলতা বজায় রাখার জন্য নিয়মিত
হাঁটা প্রয়োজন।
হাঁটার
উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না। যেকোনো ধরনের হাঁটাই উপকারী। তবে প্রকৃত সুফল পাওয়ার
জন্য বিশেষজ্ঞরা প্রতিদিন আধঘন্টা করে সপ্তাহে অন্তত পাঁচ দিন মধ্যম গতির হাঁটার উপদেশ
দেন। তবে কোনো শারীরিক অসুস্থতা থাকলে চিকৎসকের পরামর্শ মতো হাঁটার অভ্যাস করুন।
No comments:
Post a Comment