সবাই জানে বেল খুবই উপকারী ফল। বাংলাদেশ ও ভারতের
পল্লী অঞ্চলে সর্বত্র বেল পাওয়া যায়। বেলগাছের ছাল, পাতা, ফুল সবই ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত
হয়। তবে বেল সম্বন্ধে আমাদের সবারই একটি ভুল ধারণা আছে। পণ্ডিত চরক তার গ্রন্থে বলেছেন,
আমরা সবাই জানি পাকা বেল সবচেয়ে উপকারী। তাই বেল কেনা বা খাওয়ার সময় পাকা বেল খুঁজি।
সবাই ভাবে, পাকা বেল পেট পরিষ্কার করে। অন্ত্র ও মলভান্ডের দোষ নিরসন হয়। কিন্তু তার
মতে, পাকা বেল অপকারী। পাকা বেল হজম কষ্টসাধ্য। দীর্ঘদিন পাকা বেল খেলে অন্ত্রে ছিদ্র
তৈরী হতে পারে। কিন্তু কাঁচা বেল ঠিক বিপরীত কাজ করে। অর্থাৎ অন্ত্রে ছিদ্র হতে দেয়
না এবং ছিদ্র হলে তা বন্ধ করায় সহায়ক হয়। তাই নিয়মিত দীর্ঘদিন পাকা বেল খাওয়া ঠিক নয়,
বরং কাঁচা বেল পোড়া বা কাঁচা শুঁটকি উপকারী।
প্রয়োগ ও ব্যবহার
১. পেটের অসুখে: অনেকের পেটব্যথা ও পেটখারাপ থাকে প্রায় সারা
বছর। হজমের গোলযোগ, পেটের ভেতর গড়গড় করা, ভুটভাট করা ও ফেট ফাঁপা হয়। যাদের এই সমস্যা
রয়েছে, তারা কাঁচা বেলের গায়ে আধা ইঞ্চি পুরু করে কাদা মাখিয়ে চুলার কাঠের আগুনে পুড়িয়ে
সকাল-বিকেল তিন-চার চামচ বেল সামান্য গুড় বা চিনি দিয়ে তিন-চার দিন খেলে উপকার পাবেন।
এছাড়া কাঁচা বেলের শাঁস শুঁটকি পানিতে ভিজিয়ে সেই পানি খেলেও উপকৃত হবেন। এতে পুরনো
আমাশয়ও ভালো হয়।
২. সর্দি ও জ্বরজ্বর ভাব হলে: সর্দি হলে বা গায়ে ব্যথা এবং জ্বরজ্বর ভাব হলে
বেলপাতা বেটে রস বের করে এক ফোঁটা মধুসহ তিন-চার দিন খেলে ভালো হয়।
২. স্মৃতিশক্তি বাড়াতে: ছাত্র-ছাত্রীদের স্মৃতিশক্তি বর্ধনে দুই বা
তিনটি বেলপাতা ঘিয়ে ভেজে মচমচে করে মিছরির গুঁড়োর সাথে এক সপ্তাহ প্রতিদিন সকালে খাওয়ালে
স্মৃতিশক্তি বেড়ে যায়।
৪. কামোন্মাদনা কমাতে: প্রতিদিন সকালে খালি পেটে পাঁচটি বেলপাতার রস
খেলে কামোন্মাদনা কমে যায়। ব্রক্ষ্মচারীরা এই বেলপাতার রস পান করে রতিশক্তি নিয়ন্ত্রণে
রাখেন।
৫. শুক্র তারল্যে: বেলগাছের শিকড় ভালো করে ধুয়ে সামান্য জিরার
সাথে বেটে ঘিয়ের সাথে খেলে শুক্র গাঢ় হয়।
৬. গায়ের দুর্গন্ধে: অনেকের শরীর থেকে দুর্গন্ধ নির্গত হয়। এজন্য
দাম্পত্য কলহ এমনকি বিবাহ বিচ্ছেদ পর্যন্ত হয়। তাদের পাশে কেউ বসতে পারে না। তারা বেলপাতা
দিয়ে পানি সেদ্ধ করে সেই পানিতে শরীর মুছলে বা ওই পানি দিয়ে গোসল করলে শরীরের দুর্গন্ধ
দূরীভূত হয়। সূত্র: হেলথ ম্যাগাজিন, মার্চ ২০১৪।
No comments:
Post a Comment