স্ট্রেস দেহ-মনে প্রতিক্রিয়া ঘটায়। “Fight or Flight” একটি স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া। দেহ-মন সুরক্ষা হয় এই প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে। আবার অতিরিক্ত উদ্বিগ্ন ব্যক্তির দেহের সুরক্ষা হাতছাড়া হয়ে যায়। নানা ধরনের অস্বস্তিদায়ক উপসর্গ ও অনুভূতি তাদের কাবু করে ফেলে।
একেক জনের মধ্যে একেক ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। তবে সাধারণত প্রতিক্রিয়াগুলোর মধ্যে কমন কিছু বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায়:
- হার্টের পাম্পিং ক্ষমতা বেড়ে যায়।
- হার্ট এ সময় স্ট্রং বিট দিতে থাকে। রক্ত দ্রুত গতিতে পেশির দিকে ছুটে যায়। হার্টে ফিরে আসে। আবার পেশির দিকে যায়।
- অতিরিক্ত রক্তপ্রবাহ কোষে কোষে গ্লুকোজ ও অক্সিজেনের চালান বাড়িয়ে দেয়। ফলে পেশির শক্তি-সামর্থ্য বেড়ে যায়। এ সময় অর্জিত হয় যুদ্ধের শক্তি অথবা বেগবান হয় পালিয়ে বাঁচার শক্তি। অর্জিত অতিরিক্ত শক্তি-সামর্থ্য যদি এ সময় খরচ না হয়, দেহ-মনে ক্ষতিকর উপসর্গ আসন গেড়ে বসে।
- শ্বাস কাজে সমস্যা শুরু হয়ে যেতে পারে।
- ফুসফুস এ সময় বেশি কাজ করে। অতিরিক্ত অক্সিজেন রক্তে সরবরাহ করতে হয়। উদ্বেগ অবস্থায় এটি উপকারী-মানুষের চিন্তার গতি এ সময় স্বচ্ছ হয়, পেশির সামর্থ্য বেড়ে যায়।
- দৈহিক অতিরিক্ত শক্তি যদি খরচ না হয়, অক্সিজেনের জ্বালানি যদি না বাড়ে, রক্তে গ্যাসের ব্যালেন্স হারিয়ে যায়, নানা ধরনের বাজে সেনসেশন তখন দেহ-মন আক্রান্ত করে রাখে।
- স্ট্রেস থেকে শ্বাসযন্ত্রে অস্বাভাবিকতা শুরু হয়। তবে চিকিৎসার প্রধান শর্তই হচ্ছে পরিস্থিতি মোকাবেলা করা এবং স্ট্রেস রিঅ্যাকশনের মাত্রা কমিয়ে আনা। পেশির টানটান কম্পমান অবস্থা উদ্বিগ্ন হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পেশিতে টানটান অবস্থা তৈরি হয়, স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাঁপতে শুরু করে পেশি। ফলে মাথাব্যথা, ঘাড়ব্যথা কিংবা পিঠব্যথা হতে পারে।
ভয়ের মুখোমুখি হলে রক্তে স্ট্রেস হরমোন এড্রিনালিন নি:সৃত হয়। বিচলিত অবস্থা তৈরি হয়। অস্থিরতা বাড়ে। ভয় মোকাবেলার জন্যই দেহে এমনটি ঘটে থাকে। এ অবস্থায় যদি অকর্মণ্যের মতো নিশ্চল থাকতে হয় তবে বিপরীতভাবে আমাদের দেহ-মন ক্ষতিগ্রস্ত হয়, দেহে দুর্বলতা বেড়ে যায়। মাথা ঘোরাতে পারে। দেহে নানা ধরনের উপসর্গ বেড়ে যেতে পারে।
বমি
বমি লাগা,
খাদ্যযন্ত্রের সমস্যা
স্ট্রেসে থাকলে পরিপাকতন্ত্রের কাজ বন্ধ হয়ে যায়, ফাইট করার জন্য দেহের সব অ্যানার্জি তখন ছুটে যায় পেশিতে। অতিরিক্ত স্ট্রেসের সময় কোনো খাবার হজমের অপেক্ষা থাকলে পেটের ভেতর থেকে বমি হয়ে বেরিয়ে আসে। পেটের ভেতর যেন বাটারফ্লাইয়ের মতো চক্র তৈরি হয়, চরম উত্তেজিত অবস্থা বজায় থাকে। বিকল্প উপসর্গ হিসেবে ডায়ারিয়া দেখা দিতে পারে, বারবার বাথরুমে যাওয়ার তাগিদ বেড়ে যেতে পারে। ব্লাডার খালি করার ‘আরজেনসি’ও বাড়তে পারে। মুখও শুকিয়ে যেতে পারে। কারণ এ সময় দেহের তরল অংশ রক্তের পরিমাণ বাড়ানোর জন্য ছুটে যায়।
ঘাম ঝরতে পারে, ফ্লাশিং বেড়ে যেতে পারে। দেহের বাইরের সারফেনের দিকে রক্ত ছুটে আসে। ধেয়ে আসা রক্তোচ্ছ্বাসের কারণে দেহে উত্তাপ বেড়ে যেতে পারে, হট মনে হতে পারে নিজেকে, মুখ লাল হয়ে উঠতে পারে, ঘাম বের হতে পারে।
অতিসঙ্কটময় মুহূর্তে তীব্র অ্যাংজাইটির কারণে উল্টোটি হতে পারে। বডি সারফেস থেকে আকস্মিক রক্ত ছুটে যেতে পারে দেহের ভেতরের দিকে। তখন মুখে রক্তশূন্যতার চিহ্ন ভেসে উঠে ফ্যাকাশে লাগতে পারে, ঠান্ডা হয়ে যেতে পারে শরীরের বাইরের সারফেস।
অনেক সময় নাটকীয়ভাবে রক্তচাপ কমে যায়, জ্ঞান হারিয়ে ফেলতে পারে কেউ কেউ। আকস্মিক ভয়াবহ স্ট্রেসের কারণে ডেঞ্জার স্পটের প্রতি চোখের দৃষ্টি তির্যক হয়, তীক্ষনোভাবে আমরা দেখে বোঝার চেষ্টা করি পরিস্থিতির ভয়াবহতা। স্বয়ংক্রিয়ভাবে এমনটি ঘটে যায়। বেশ কতক্ষণ তাকানোর পর তির্যক দৃষ্টি অন্যত্র সরানো হলে দৃষ্টিপাত স্বাভাবিক হওয়া পর্যন্ত অসামঞ্জস্য অ্যাডজাস্টমেন্টের কারণে চারপাশ ঝাপসা মনে হতে পারে। প্রথমবার চশমা ব্যবহারের পরও এমন অনুভূতি হতে পারে।
স্থায়ী ক্লান্তিকর অলসতা, অস্বাভাবিক নিদ্রালু অবস্থা, অবসাদে সেঁটে যেতে পারে দেহ-মন। দীর্ঘস্থায়ী উদ্বেগের কারণে এমনটি ঘটতে পারে। উদ্বেগ রিলিজ না হলে দেহ শান্তি অর্থে ঝলসে যায়, পুড়ে যায়, অফুরান ত্বরান্বিত চাহিদা দেহের উদ্দীপনার ওপর প্রেসার তৈরি করে। দেহের ফাংশনাল সিস্টেম তখন ভেঙে পড়ে। দীর্ঘমেয়াদি উদ্বেগের কারণে তাই অনেকে ঘুমাতে পারে না, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এদের কমে যায়, বিষাদ রোগে আক্রান্ত হয়। সূত্র: ম্যাগাজিন, নভেম্বর ২০১৩।
No comments:
Post a Comment